Recent News

বিচারকের অনন্য উদ্যোগ, ঠিকানাহীন ১১ শিশু মায়ের কোলে

দেশে এই প্রথম রাজশাহী সদর সিনিয়র সহকারী জজ আদালতের উদ্যোগে নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভের সুযোগ পাচ্ছেন। গত তিন বছরে বিচারক আবু সাঈদের আদালতের মাধ্যমে পিতৃ-মাতৃহীন ১১টি শিশুকে নিঃসন্তান দম্পতিরা পেয়েছেন।

শিশুটির চোখে রঙিন চশমা। পরিপাটি পোশাক। অনবরত মায়ের হাত ধরে টানছে। বাড়ি যাবে। তার এখানে ভালো লাগছে না। মা আমেরিকান দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা। এই মা-মেয়েকে দেখে কারও বোঝার উপায় নেই যে তাদের রক্তের সম্পর্ক নেই। বিয়ের পর এই মা ১১ বছর নিঃসন্তান ছিলেন। অবশেষে আদালতের মাধ্যমে রাজশাহীর ছোটমণি নিবাস থেকে আট মাস বয়সে এই শিশুটিকে দত্তক নেন। এখন তার বয়স চার বছর। এই মেয়েটিই এখন তাঁর পৃথিবী।

এই সুযোগ করে দিয়েছেন রাজশাহীর সদর সিনিয়র সহকারী জজ মো. আবু সাঈদ। দেশে এই প্রথম তাঁর উদ্যোগে নিঃসন্তান দম্পতিরা সন্তান লাভের সুযোগ পাচ্ছেন। যদিও আদালতের ভাষায় এই মা-বাবা হচ্ছেন ‘আইনি অভিভাবক’। গত তিন বছরে আবু সাঈদের আদালতের মাধ্যমে পিতৃ-মাতৃহীন ১১টি শিশুকে নিঃসন্তান দম্পতিরা পেয়েছেন। সমাজসেবা অধিদপ্তর পরিচালিত রাজশাহীর ছোটমণি নিবাসে এতিম, অসহায়, পরিত্যক্ত, হারিয়ে যাওয়া বিপন্ন শিশুদের প্রতিপালন ও পুনর্বাসন করা হয়। সেখান থেকেই বাচ্চাদের নিঃসন্তান দম্পতিদের দেওয়া হচ্ছে।

বিজ্ঞাপন
শুধু সন্তানকে আইনি অভিভাবকের কাছে তুলে দিয়েই দায়িত্ব শেষ করেননি বিচারক আবু সাঈদ। তিনি প্রতি তিন মাস পরপর এই শিশুদের আদালতে আনার নিয়ম করে দিয়েছেন। বিচারক এজলাসে পর্যবেক্ষণ ও জিজ্ঞাসাবাদ করেন। এমনকি তাঁর খাসকামরাতেও এই শিশুদের আলাদাভাবে খোঁজখবর নেন, তাদের কোনো সমস্যা হচ্ছে কি না। গত বুধবার এই বাচ্চাদের নিয়ে সব দম্পতি আদালতে এসেছিলেন। সেখানেই এই দম্পতি ও তাঁদের নেওয়া শিশুদের সঙ্গে দেখা হয়।

সর্বশেষ বাচ্চাটি নিয়েছেন একজন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর ৩২ বছরের দাম্পত্য জীবনে বাচ্চা হয়নি। তিনি পিএইচডি করতে গিয়ে ইংল্যান্ড ও কানাডায় চিকিৎসা নিয়েছেন। সর্বশেষ ভারতে টেস্টটিউব বেবি নেওয়ার চেষ্টা করেও সফল হননি। তিনি আদালতের মাধ্যমে দেড় বছরের একটি মেয়েকে পেয়েছেন।

পাবনা থেকে ছেলেকে নিয়ে এক স্কুলশিক্ষক মা এসেছিলেন। তাঁর ৩০ বছরের দাম্পত্য জীবনে কোনো সন্তান হয়নি। তাঁর ভাইবোনেরা সব দেশের বাইরে থাকেন। তাঁর জীবনটা হতাশায় ভরে উঠেছিল। দুই বছর আগে এই ছেলেটাকে নিয়েছেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছেলে এখন রাতে আমার গলা জড়িয়ে না ধরলে ঘুমাতে পারে না। এর মধ্যে আমার স্বামী মারা গেছেন। দেশে কেউ নেই। মাঝে মাঝে মন খারাপ হয়। কিন্তু ছেলে আমাকে কাঁদতে দেয় না। চোখ মুছে দেয়। এখন ওর জন্য আমি বেঁচে আছি।’